মোনায়েম সরকারের সংক্ষিপ্ত জীবনী
মোনায়েম সরকার ১৯৪৫ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে এক সম্্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনীতিতে হাতে খড়ি স্ড়্গুল জীবন থেকে। স্ড়্গুল ক্যাপটেন হিসেবে তিনি তখনকার ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানে এম·এসসি· ডিগ্রি লাভ করার পর বাম রাজনীতির টানেই তিনি সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মীর জীবন বেছে নেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর মোনায়েম সরকার বাংলাদেশে স্বাধীনতার ধারা ও মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনমত গড়ে তোলেন যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। পঁচাত্তর পরবর্তী প্রায় ৪ বছর প্রবাস জীবনে তিনি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, পি·এন· হাকসার, ভূপেন গুপ্ত, রমেশ চন্দ্র, রাজেশ্বর রাও, ভি·টি· রনধিকে, অধ্যাপক শান্তিময় রায়, গণেশ ঘোষ, মন্মথ নাথ গুপ্ত প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শওকত ওসমান রচিত উত্তর পূর্ব মুজিবনগর গ্রন্থে মোনায়েম সরকারের বিশেষ এক পরিচিতি লক্ষণীয়। ডায়েরির ১৭ জানুয়ারি ১৯৭৯ তারিখে লেখা হয়ঃ দেশাত্মবোধের সঙ্গে জীবন-এষণা এমনভাবেই মিলেছে যে বঙ্গবন্ধুর মৃতুøর পর আর দেশে থাকতে পারেনি। এখানে সে যেন সব রাজনৈতিক রিফিউজিদের অভিভাবক হয়ে বসেছিল। অভাবগ্রস্তদের জন্যে টাকা-পয়সা যোগাড় করা থেকে রাজনৈতিক প্রবাহ বজায় রাখার জন্যে কত ভাবে না নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিল। ···
ওই সময়ে মোনায়েম সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন গোপন লিফলেট, বুকলেট প্রকাশিত হয়। তিনি বিভিন্ন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তখন কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় বজ্রকণ্ঠ, লন্ডন থেকে- প্রতিরোধ, বাংলার ডাক, সোনার বাংলা, ঝঁহ জরংব প্রভৃতি পত্রিকা প্রকাশ করে দেশে বিদেশে জনমত সৃষ্টি করেন। ১৯৭৯ সালে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু পরিষদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। স্বৈরাচারী সামরিক সরকার জিয়া ও এরশাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করার জন্য ১০-দল, ১৫-দলীয় জোট গঠনে এবং অন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিন জোটের ঐক্য গঠনে এবং রূপরেখা প্রণয়নেও বিশেষ অবদান রাখেন। নিভৃতচারী মোনায়েম সরকার সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছেন। দেশের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্ড়্গৃতিক আন্দোলনে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সংস্ড়্গৃতি ও সাহিত্যক্ষেত্রেও তাঁর পদচারণা অবারিত। তিনি উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তাঁর লেখায় সমসাময়িক চলমান রাজনীতির বিষয়াদি প্রাধান্য পায়।
তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থগুলি হলোঃ বাংলাদেশে বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের উত্থান অনিবার্য (১৯৮৭), রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি (১৯৮২), বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বিকাশে ঐক্য অপরিহার্য (১৯৯১), ইতিহাসের আলোকে বাঙালি জাতীয়তার বিকাশ ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯২), জাতীয় বিকাশের মূলস্রোত বনাম তৃতীয় ধারা (১৯৯২), গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বামপন্থীদের করণীয় (১৯৯২), বামপন্থীদের সঙ্কট ও বাংলাদেশের রাজনীতি (১৯৯৩), ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯৪), মৃতুøঞ্জয়ী মুজিব (১৯৯৫), বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৯৯৬), জাতীয় চার নেতা স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৬), বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস (যৌথভাবে) (১৯৯৭), স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৭), শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ (১৯৯৮), বাঙালি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু (২০০০), বহতা নদীর মত আওয়ামী লীগ (২০০০), বাঙালির কণ্ঠ (২০০১), একজন রাজনৈতিক কর্মীর প্রতিচ্ছবি (২০০৩), যুক্তফ্রণ্ট থেকে মহাজোট (২০০৭), জাগো বাঙালি কোন্ঠে সবায় (২০০৭), স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রণ্টঃ চুয়ান্নর অভিজ্ঞতা (৫৪-র নির্বাচনের অপ্রকাশিত দলিল), জেগে ওঠার সময় এখনই (২০০৭), বাংলা একাডেমী কর্তৃক মোনায়েম সরকারের সম্পাদনায় প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুর জীবনী গ্রন্থ (দুই খণ্ডে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানঃ জীবন ও রাজনীতি (২০০৮), রাজনীতির চালচিত্র (২০০৮), বাংলাদেশের গণতন্ত্রায়ণের সমস্যা ও সম্্ভাবনা (২০০৯), Left Democratic Humane World Order (2009) (২০০৯), মোনায়েম সরকারের নির্বাচিত রাজনৈতিক রচনা (২০০৯), সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি (২০১০), বাঙালির ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ (২০১০), United Nations and Global Crises (২০১০), বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও শেখ হাসিনা (২০১১), বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতির সংকট ও সম্্ভাবনা (২০১১) ইত্যাদি।
সাপ্তাহিক যুগবাণী, নতুন বাংলা, দেশবন্ধু ও মৃদুভাষণ প্রকাশনা-সম্পাদনার কাজে চার দশক শ্রম ও মেধা দিয়ে অবদান রাখেন। বর্তমানে তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ-এর মহাপরিচালক।